চকরিয়া প্রতিনিধিঃ
মাতামুহুরী নদী উপারে জনবসতি। মাঝখানে যে বেড়িবাঁধটি রয়েছে এটি চকরিয়া শহর রক্ষা বাঁধ।উজানে বৃষ্টি হলেই নেমে আসা পানির ধাক্কায় বাঁধটি ঝুঁকির মুখে পড়ে। এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত ৫০ গজ ভূমিসহ ছয়টি ঘর বিলীন হয়ে যায় বন্যায়। ফাটল ধরেছে বাঁধে।
যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে বাঁধটি। এ অবস্থায় অপর পাশের বাসিন্দারা রয়েছেন চরম আতঙ্কে। তাদের নাওয়া-খাওয়া এখন হারাম। নারী-পুরুষ একট্টা হয়ে পাহারা দিচ্ছেন বাঁধ। ভাঙন বাঁধ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ায় আতঙ্ক আরো বেড়ে গেছে তাদের। ফলে শতাধিক ঘরের সদস্যরা মালামাল অন্যত্র নিয়ে গেছেন। এই দৃশ্য বিরাজ করছে কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের দিগরপানখালী গ্রামে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে হঠাৎ করে শহর রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। এর কিছুক্ষণ পর বাঁধের একটি অংশ নদীতে তলিয়ে যায়। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন বাঁধ সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দরা। পরে স্থানীয় এমপি জাফর আলম, মেয়র আলমগীর চৌধুরীসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের খবর দেয়া হয়। পরে তারা ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহায়তায় বালির বস্তা ও মাটি ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা চালান। এদিন রাতে কোনো রকমে বাঁধটি রক্ষা করা হলেও কতক্ষণ টিকে থাকবে তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ সময় বাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দারা জানান, শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙন ঠেকাতে বর্ষার আগেই ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিলো। সঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নেয়ায় বাঁধ সংলগ্ন লোকজনদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নদীর তীরে ব্লক, বালি দেয়ার কথা থাকলেও ব্লক দেওয়া হয়নি। ভাঙন শুরু হলে নিকটস্থ বিভিন্ন বাসিন্দাদের সহায়তায় বালির বস্তা ও মাটি দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা পানির ধাক্কায় বাঁধ পানিতে ভেসে যায়। ফলে, সড়কের বাঁধে ফাটল ধরেছে। যেকোনো মুহূর্তে ওই বাঁধ ভেঙে পৌরশহরে পানি প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জরুরি ভিত্তিতে বাঁধটি স্থায়ীভাবে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা না হলে অসংখ্য পরিবার আশ্রয়স্থল হারিয়ে পথে বসবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, পৌর শহর রক্ষা বাঁধটি ভাঙার খবর পেয়ে রাতেই পরিদর্শন করেছি। বাঁধ রক্ষার জন্য সব কিছু করা হবে। এরমধ্যে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম শেষ হলে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধটি স্থায়ীভাবে নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হবে।
চকরিয়া পৌরসভার মেয়র মো. আলমগীর চৌধুরী বলেন, শহর রক্ষা বাঁধটি বর্তমানে হুমকির মুখে। গতকাল রাতে বাঁধের অর্ধেক অংশ পানির স্রোতে ভেসে গেছে। বাঁধটি রক্ষা জন্য সারারাত শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেছি। এই বাঁধ ভেঙে গেলে পৌরশহরে ব্যাপক ক্ষতি হবে পাশাপাশি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক টিকিয়ে রাখাও কষ্টকর হয়ে পড়বে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, বাঁধ ভাঙনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বাঁধটির বিষয়ে ডিসি স্যারকে অবহিত করেছি। বাঁধটি স্থায়ীভাবে নির্মাণের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) এমপি আলহাজ্ব জাফর আলম বলেন, রাতে খবর পেয়ে বাঁধটি রক্ষার জন্য চেষ্টা চালিয়েছি। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ছাড়া এটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব না।
তিনি আরো বলেন, শহর রক্ষা বাঁধটি রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কথা বলবো। এরমধ্যে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বাঁধটি দেখে গেছেন।