
হুমায়ুন সিকদারঃ
পুর্ণিমা তিথির জোয়ার ও সাগরে ৩ নং সতর্কের প্রভাবে পানিতে তলিয়ে গেছে কক্সবাজারের উপকুলীয় অঞ্চলের কুতুবদিয়ার বায়ু বিদ্যুৎ এলাকাসহ ৫ গ্রাম, মহেশখালীর মাতারবাড়ী ও টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের এলাকা। জেলার উপকূলীয় এলাকার কয়েক গ্রামের প্রায় মানুষের বসত ভিটায় প্লাবিত হয় জোয়ারের পানিতে।
শাহপরীর দ্বীপের জোয়ারের পানি রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সাগরের পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। যদিও উপকুলের বেড়িবাঁধের ভাঙ্গনদশা বহু বছরের।
সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে দ্বীপ-উপজেলা কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল গ্রামে অবস্থিত বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্রসহ কিরণ পাড়া, কাজীর পাড়া, তেলিপাড়া, হায়দার পাড়া ও উত্তর ধূরুং কাইছার পাড়া। পূর্ণিমার প্রভাব, শ্রাবণ মাসের‘জো’ গুমড় আবহাওয়া সর্বোপরি ৩ নং সতর্ক সংকেত থাকায় বিলীন বেড়িবাঁধ হয়ে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ওসব গ্রামের ওপরদিয়ে সরাসরি পানি ডুকে পড়েছে সমুদ্রে জোয়ারের পানি। এতে করে বহু ঘরবাড়ীসহ রোপা আউশ, রাস্তাঘাট ও পুকুর নূনা পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। এ ছাড়া উত্তর ধূরুং কাইছার পাড়া এলাকায়ও ডুকেছে জোয়ারের পানি। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় বরাদ্দে নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধ নির্মাণ-সংস্কারকাজ ধীরগতির কারণে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে দ্বীপের প্রায় দু‘লাখ বাসিন্দা। এ নাজুক অবস্থার জন্য ঠিকাদারকেই দোষাচ্ছে দ্বীপের মানুষ। টানা লকডাউন চলাকালে দিশাহারা হয়ে পড়েছে সামুদ্রিক নূনা জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সমূহ।
দীর্ঘদিন ধরে জোয়ারের পানিতে ঘর-সম্পদ হারিয়েছে বহু মানুষ। হারিয়েছে ভিটে-বাড়ি ও আপনজনদের। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গা অংশের কিছুটা জোড়াতালি দিলেও স্থানীয়দের সম্পদ রক্ষার মতো বাঁধের পূণ:নির্মাণ কাজ হয়নি মোটেও। ফলে বর্ষা শুরুর আগেই আতঙ্ক বাড়ছে উপকুল জুড়ে।
ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে আতঙ্কে দিন কাটছে পেকুয়া চকরিয়া, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার সদর ও মহেশখালী উপজেলার ৬৪ গ্রামের মানুষের। কক্সবাজার উপকূলে প্রায় ২৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, জেলায় বেড়িবাঁধ রয়েছে ৫৯৫ কিলোমিটার। গত মাসেও পূর্ণিমার জোয়ারের ধাক্কায় জেলার টেকনাফ, পেকুয়া, চকরিয়া, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার সদর ও মহেশখালী উপজেলায় প্রায় ৮২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে যায়। আংশিক ভেঙে যায় আরও ১৫৮ কিলোমিটার। এখন জোয়ারের ধাক্কায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলোও ভেঙে গেছে। ফলে ঝুঁকির মুখে পড়ছে উপকূলের প্রায় ১১ লাখ মানুষ।
এদিকে গত বছর খুরুশকুল, চৌফলদন্ডীর ভারুয়াখলীসহ শহরের মাঝিরঘাট ও পেশকার পাড়ায় প্রায় সাত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েক’শ ঘর-বাড়ি প্লাবিত হয়। এ বছরও উপকূলের হাজারো মানুষ ঝুঁকির মুখে দিনাতিপাত করছে। রামু উপজেলার রশিদনগর, জোয়ারিয়ানালা, হাইটুপি, মিস্ত্রিপাড়া ও মুক্তারকূল গ্রামে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৮টি গ্রাম ঝুঁকির মুখে রয়েছে। জোয়ারের সময় এসব গ্রামে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে থাকে।
ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য আবেদন করেও পাউবোর সাড়া মিলছে না। ভাঙা বেড়িবাঁধ দ্রুত সংস্কার করা না হলে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ বিপদে পড়তে পারে। একইভাবে পেকুয়ার উজানটিয়া, কাকপাড়া, শরৎঘোনা ও রাজাখালী, মহেশখালীর হামিদখালী, টিয়াকাটি, সাপমারার ডেইল, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা, চকরিয়ার কন্যারকুম, নাপিতখালী, পুরুত্যাখালী এবং কুতুবদিয়ার আলী আকবরডেইল, উত্তর ধুরুং ও দক্ষিণ ধুরুংয়ের অন্তত ৪৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে।
সুত্র জানায়, পাউবোর প্রায় ২৪০ কিলোমিটার ভাঙা বেড়িবাঁধ নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে উপকূলের প্রায় ১১ লাখ মানুষ। জোয়ারের পানিতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা আছে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়িসহ নানা অবকাঠামো। তার পরও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মিত হচ্ছে না।
, সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ও পূর্ণিমার জোয়ারে জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে ভাঙা বাঁধের সংস্কার শুরু হবে।