উখিয়া প্রতিনিধিঃ
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্য ও মলমূত্রের কারণে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের প্রায় ১০০ একর জমির চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। তিন বছর ধরে অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে এসব জমি। এতে অর্থনৈতিক সংকটে আছেন শত শত কৃষক।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও চাষিরা জানান, এখন ধান চাষের মৌসুম। অথচ উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের সঙ্গে লাগোয়া পশ্চিমপাড়া ও লম্বাশিয়ার ধানি জমি মলমূত্র ও ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের কয়েকটি ক্যাম্পের ময়লা আবর্জনা ও মানবর্জ্য এসে জমে এই জমিতে।
কৃষক জামাল উদ্দিন বলেন, ডি ফোর, ফাইভ, ওয়ান ও টু ইস্টসহ পাঁচটি ক্যাম্পের বর্জ্য ফেলা হয় এই জমিতে। দীর্ঘ তিন বছর ধরে এ জমিতে চাষ বন্ধ। কিন্তু এ জমিতে চাষাবাদ করে পুরো বছরের সংসার চলে আমাদের।
রহিম উদ্দিন নামে আরেক কৃষক বলেন, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে ধান চাষ বন্ধ রয়েছে। অথচ এ জমি আমাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু গেল তিন বছরে ধান চাষ বন্ধ থাকায় লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।
ক্যাম্প লাগোয়া পশ্চিমপাড়া এলাকার কৃষক জমির আহমেদ বলেন, ক্যাম্পের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল, পচনশীল ময়লা, মানব বর্জ্যসহ নানা বর্জ্যে অতিষ্ঠ আমরা। কোনোভাবেই এ বর্জ্য ফেলানো ঠেকানো যাচ্ছে না।
শত একর ধানি জমি চার বছর ধরে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে গেছে জানিয়ে জমির মালিক আলী আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পশ্চিমপাড়া ও লম্বাশিয়ার এই বিস্তীর্ণ জমিতে ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এখানকার চাষিরা। কিন্তু কোনোভাবেই বর্জ্য ঠেকানো যায়নি। ফলে এ জমিতে আর চাষ করা সম্ভব হয়নি।
উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (কুতুপালং) হেলাল উদ্দিন বলেন, একটি ইউ ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য নানা জায়গায় আবেদন করলেও সাড়া দেয়নি কেউ। দফায় দফায় কৃষকদের নিয়ে প্রশাসন, এনজিও কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে গিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার কক্সবাজারের সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে ৫ হাজার ভূমি দখল করেছে। সেসব জমিতে থাকা গাছপালা নিধন করে মূলত এসব ক্যাম্প গড়ে ওঠে। তাদের জন্য ছেড়ে দিতে হয়েছে অনেক স্থানীয়দের জমি। এখন এসব রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্যের কারণে চাষাবাদ বন্ধ। এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। দ্রুত ভালো পরিকল্পনা করে এসব ময়লা আবর্জনা অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।
এসব এলাকার কৃষি জমি রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হবে জানিয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আমিন আল পারভেজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে এ সংকট সমাধানে কাজ করবে জেলা প্রশাসন।